যে কারণে জামায়াতের পদ থেকে সরানো হলো শাহজাহান চৌধুরীকে
চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতে ইসলামীর আমির পদ থেকে সাবেক এমপি শাহজাহান চৌধুরীকে সরিয়ে দেওয়ার ঘটনা দলের নেতাকর্মী ও তার অনুসারীদের কাছে যেন ‘বিনা মেঘে বজ্রপাত।’ গত ১৩ জুন শুক্রবার দলের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া মোহাম্মদ গোলাম পরোয়ার তাকে সকালে সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসনে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে জামায়াতের প্রার্থী হিসাবে ঘোষণা করেন। আর বিকালে শহরের দলীয় কার্যালয়ে এক দায়িত্বশীল সমাবেশে নগর আমিরের পদ থেকে তাকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানান। এই ঘোষণার পর তার অনুসারীরা অনেকটাই হতভম্ব হয়ে পড়েন। যার রেশ রয়েছে এখনো। তারা বলছেন, জাতীয় নির্বাচন আসন্ন। এই নির্বাচনের আগে শাহজাহান চৌধুরীর মতো একজন গুরুত্বপূর্ণ ও আত্মপ্রত্যয়ী নেতাকে নগর আমিরের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত কতটা সঠিক তা প্রশ্নের দাবি রাখে। এদিকে ৫ আগস্টের পর যার ‘অঙ্গুলি হেলনেই’ নিয়ন্ত্রিত হয়েছে চট্টগ্রামের প্রশাসনসহ প্রায় সব সেক্টর; সেই প্রবীণ ও প্রভাবশালী নেতার দলের গুরুত্বপূর্ণ পদ হারানোর ঘটনা দলীয় নেতাকর্মীদের কাছে ছিল অপ্রত্যাশিত ও অনাকাঙ্ক্ষিত। তারা তা মানতে পারছেন না। কেবল দলীয় নেতাকর্মী বা তার অনুসারীরাই নয়; রাজনীতি সচেতন সাধারণ মানুষও তা নিয়ে কৌতূহলী হয়ে ওঠেন। কী কারণে শাহজাহান চৌধুরীর মতো নেতাকে দলের গুরুত্বপূর্ণ নগর আমির পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার এমন কঠিন সিদ্ধন্ত নেওয়া হলো, এটি কি কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা, নাকি রুটিন ওয়ার্ক-তা নিয়ে চলে নানা বিচার-বিশ্লেষণ, আলোচনা-সমালোচনা। এদিকে, চট্টগ্রাম মহানগরের নায়েবে আমির মোহাম্মদ নজরুল ইসলামকে ভারপ্রাপ্ত আমিরের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। পদ থেকে সরানোর বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য শাহজাহান চৌধুরীর সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও রিসিভ না করায় তার বক্তব্য জানা যায়নি। তবে চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মোহাম্মদ নুরুল আমিন যুগান্তরকে বলেন, ‘শাহজাহান চৌধুরী জামায়াতে ইসলামীর তৃণমূল থেকে উঠে আসা একজন ত্যাগী ও বর্ষীয়ান জননেতা। আগামী নির্বাচনে জামায়াত ৩০০ আসনে প্রার্থী দেবে। অতীতে বিএনপির সঙ্গে জোট করার কারণে সীমিত আসনে জামায়াত প্রার্থী দিয়েছে। এখন ৩০০ আসনে প্রার্থী দিলে কেন্দ্রে যোগ্য ও অভিজ্ঞ নেতার দরকার। সে কারণেই তাকে কেন্দ্রে সংযুক্ত করা হয়েছে। যদিও তিনি আগে থেকেই কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য হিসাবে আছেন। ব্যক্তি হিসাবে মানুষের ভুল-ত্রুটি থাকতেই পারে। কিন্তু তাকে নগর আমির পদ থেকে সরানোটা ছিল দলের একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। দলের বর্তমান আমির ডা. শফিকুর রহমান সিলেট মহানগর আমির এবং সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার খুলনা মহানগর আমির হিসাবে দায়িত্ব পালন শেষে কেন্দ্রে গেছেন। একইভাবে শাহজাহান চৌধুরীও চট্টগ্রাম নগর আমির থেকে কেন্দে যাচ্ছেন। আগামীতে দলের জাতীয় কাউন্সিল বা সম্মেলন হলে তিনি হয়তো আরও গুরু দায়িত্ব পাবেন।’ তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তার বিরোধী শিবিরের একাধিক নেতা বলছেন, অতীতে দলের জন্য অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষা থাকলেও ৫ আগস্টের পর শাহজাহান চৌধুরী অনেকটাই ‘অপ্রতিরোধ্য’ হয়ে ওঠেন। তার অনুসারীরা দখল, বেদখল, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হন। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে যেখানে প্রাচীন এই দলটি মানুষের কাছাকাছি যাওয়ার জন্য কেবল মুসলমান নয়; ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের নিরাপত্তার বিষয়েও সদা-সতর্ক-সেখানে চট্টগ্রাম মহানগরী, সাতকানিয়াসহ বিভিন্ন স্থানে উল্টোপথে হেঁটেছেন তার অনুসারীরা। তিনি নিজেও চট্টগ্রামের বিখ্যাত একটি দ্বীনি প্রতিষ্ঠান এবং দুটি বিখ্যাত দরবার শরীফ নিয়ে অযাচিত মন্তব্য করেছেন। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন থেকে অর্থ নিয়ে নগরীর একটি খাল খনন বা পরিষ্কার করার ক্ষেত্রেও অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। স্বয়ং চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত এই অভিযোগ করেন প্রকাশ্যে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মূলত এসব কারণে জামায়াতের চট্টগ্রাম মহানগর ও সাতকানিয়ার রোকন পর্যায়ের নেতারা কেন্দ্রে অভিযোগ দেন। অভিযোগের কারণে শাহাজাহান চৌধুরীকে নগর আমিরের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে সরানোর কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সূত্র জানায়, নগর জামায়াতের আমিরের দায়িত্বে থাকলেও চট্টগ্রাম উত্তর, দক্ষিণ এমনকি বৃহত্তর চট্টগ্রামে জামায়াতের একজন শক্তিশালী নেতা হিসেবেই পরিচিত ছিলেন শাহজাহান চৌধুরী। সাতকানিয়া উপজেলার পৌর সদরের ছমদও পাড়ার বাসিন্দা এই নেতা তৃণমূল থেকে উঠে এসেছেন। শিবিরের সর্বনিম্ন স্তর ‘কর্মী’ থেকে শুরু করে ধাপে ধাপে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করে নগর জামায়াতের আমিরের পদ পান ২০২৪ সালে। রোকনদের ভোটেই তিনি আমির নির্বাচিত হন দুই বছরের জন্য। রাজনীতি করতে গিয়ে এক ডজনের বেশি সুনির্দিষ্ট মামলার আসামি হয়েছেন। বহুবার জেল খেটেছেন। সর্বশেষ আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে টানা চার বছর জেল খাটেন। তিনি এর আগে ১৯৯১ ও ২০০১ সালে সাতকানিয়া লোহাগাড়া আসনে জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে দুই দফায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১ মেয়াদে সংসদে জামায়াতের সংসদীয় দলের হুইপ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। চট্টগ্রামে দলের প্রয়াত আমির অধ্যাপক গোলাম আযমকে লালদিঘি মাঠে প্রতিরোধ করতে যারা এসেছিলেন সামনে থেকে তাদের প্রতিহত করেছিলেন শাহজাহান চৌধুরী। নানা কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে আলোচনা কিংবা সমালোচনায় পাদপ্রদীপের আলোয় আসা তার মতো জামায়াতের দ্বিতীয় কোনো নেতা চট্টগ্রামে নেই বললেই চলে। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর চট্টগ্রামে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন। জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, গোয়েন্দা সংস্থা থেকে শুরু করে সব জায়গায় তার গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হয়। কিন্তু তার এমন প্রভাবে স্বয়ং দলেরই একটি পক্ষ ‘ঈর্ষাকাতর’ হয়ে পড়ে। ৫ আগস্টের পর চট্টগ্রাম মহানগর এবং সাতকানিয়া উপজেলায় তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে দখল-বেদখল, সন্ত্রাস-চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপকর্মের অভিযোগ ওঠে। এদের দমন না করে উল্টো আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ উঠে। যা দলের ভাবমূর্তি ব্যাপকভাবে ক্ষুণ্ন করেছে বলে মনে করেন দলের সাধারণ নেতাকর্মী এবং রোকন পর্যায়ের নেতারা। সাতকানিয়ায় মাস দুয়েক আগে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে তার অনুসারী হিসেবে পরিচিত দুই জামায়াত

চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতে ইসলামীর আমির পদ থেকে সাবেক এমপি শাহজাহান চৌধুরীকে সরিয়ে দেওয়ার ঘটনা দলের নেতাকর্মী ও তার অনুসারীদের কাছে যেন ‘বিনা মেঘে বজ্রপাত।’ গত ১৩ জুন শুক্রবার দলের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া মোহাম্মদ গোলাম পরোয়ার তাকে সকালে সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসনে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে জামায়াতের প্রার্থী হিসাবে ঘোষণা করেন। আর বিকালে শহরের দলীয় কার্যালয়ে এক দায়িত্বশীল সমাবেশে নগর আমিরের পদ থেকে তাকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানান। এই ঘোষণার পর তার অনুসারীরা অনেকটাই হতভম্ব হয়ে পড়েন। যার রেশ রয়েছে এখনো।
তারা বলছেন, জাতীয় নির্বাচন আসন্ন। এই নির্বাচনের আগে শাহজাহান চৌধুরীর মতো একজন গুরুত্বপূর্ণ ও আত্মপ্রত্যয়ী নেতাকে নগর আমিরের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত কতটা সঠিক তা প্রশ্নের দাবি রাখে।
এদিকে ৫ আগস্টের পর যার ‘অঙ্গুলি হেলনেই’ নিয়ন্ত্রিত হয়েছে চট্টগ্রামের প্রশাসনসহ প্রায় সব সেক্টর; সেই প্রবীণ ও প্রভাবশালী নেতার দলের গুরুত্বপূর্ণ পদ হারানোর ঘটনা দলীয় নেতাকর্মীদের কাছে ছিল অপ্রত্যাশিত ও অনাকাঙ্ক্ষিত। তারা তা মানতে পারছেন না। কেবল দলীয় নেতাকর্মী বা তার অনুসারীরাই নয়; রাজনীতি সচেতন সাধারণ মানুষও তা নিয়ে কৌতূহলী হয়ে ওঠেন। কী কারণে শাহজাহান চৌধুরীর মতো নেতাকে দলের গুরুত্বপূর্ণ নগর আমির পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার এমন কঠিন সিদ্ধন্ত নেওয়া হলো, এটি কি কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা, নাকি রুটিন ওয়ার্ক-তা নিয়ে চলে নানা বিচার-বিশ্লেষণ, আলোচনা-সমালোচনা। এদিকে, চট্টগ্রাম মহানগরের নায়েবে আমির মোহাম্মদ নজরুল ইসলামকে ভারপ্রাপ্ত আমিরের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
পদ থেকে সরানোর বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য শাহজাহান চৌধুরীর সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও রিসিভ না করায় তার বক্তব্য জানা যায়নি।
তবে চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মোহাম্মদ নুরুল আমিন যুগান্তরকে বলেন, ‘শাহজাহান চৌধুরী জামায়াতে ইসলামীর তৃণমূল থেকে উঠে আসা একজন ত্যাগী ও বর্ষীয়ান জননেতা। আগামী নির্বাচনে জামায়াত ৩০০ আসনে প্রার্থী দেবে। অতীতে বিএনপির সঙ্গে জোট করার কারণে সীমিত আসনে জামায়াত প্রার্থী দিয়েছে। এখন ৩০০ আসনে প্রার্থী দিলে কেন্দ্রে যোগ্য ও অভিজ্ঞ নেতার দরকার। সে কারণেই তাকে কেন্দ্রে সংযুক্ত করা হয়েছে। যদিও তিনি আগে থেকেই কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য হিসাবে আছেন। ব্যক্তি হিসাবে মানুষের ভুল-ত্রুটি থাকতেই পারে। কিন্তু তাকে নগর আমির পদ থেকে সরানোটা ছিল দলের একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।
দলের বর্তমান আমির ডা. শফিকুর রহমান সিলেট মহানগর আমির এবং সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার খুলনা মহানগর আমির হিসাবে দায়িত্ব পালন শেষে কেন্দ্রে গেছেন। একইভাবে শাহজাহান চৌধুরীও চট্টগ্রাম নগর আমির থেকে কেন্দে যাচ্ছেন। আগামীতে দলের জাতীয় কাউন্সিল বা সম্মেলন হলে তিনি হয়তো আরও গুরু দায়িত্ব পাবেন।’
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তার বিরোধী শিবিরের একাধিক নেতা বলছেন, অতীতে দলের জন্য অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষা থাকলেও ৫ আগস্টের পর শাহজাহান চৌধুরী অনেকটাই ‘অপ্রতিরোধ্য’ হয়ে ওঠেন। তার অনুসারীরা দখল, বেদখল, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হন। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে যেখানে প্রাচীন এই দলটি মানুষের কাছাকাছি যাওয়ার জন্য কেবল মুসলমান নয়; ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের নিরাপত্তার বিষয়েও সদা-সতর্ক-সেখানে চট্টগ্রাম মহানগরী, সাতকানিয়াসহ বিভিন্ন স্থানে উল্টোপথে হেঁটেছেন তার অনুসারীরা। তিনি নিজেও চট্টগ্রামের বিখ্যাত একটি দ্বীনি প্রতিষ্ঠান এবং দুটি বিখ্যাত দরবার শরীফ নিয়ে অযাচিত মন্তব্য করেছেন। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন থেকে অর্থ নিয়ে নগরীর একটি খাল খনন বা পরিষ্কার করার ক্ষেত্রেও অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। স্বয়ং চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত এই অভিযোগ করেন প্রকাশ্যে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মূলত এসব কারণে জামায়াতের চট্টগ্রাম মহানগর ও সাতকানিয়ার রোকন পর্যায়ের নেতারা কেন্দ্রে অভিযোগ দেন। অভিযোগের কারণে শাহাজাহান চৌধুরীকে নগর আমিরের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে সরানোর কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সূত্র জানায়, নগর জামায়াতের আমিরের দায়িত্বে থাকলেও চট্টগ্রাম উত্তর, দক্ষিণ এমনকি বৃহত্তর চট্টগ্রামে জামায়াতের একজন শক্তিশালী নেতা হিসেবেই পরিচিত ছিলেন শাহজাহান চৌধুরী। সাতকানিয়া উপজেলার পৌর সদরের ছমদও পাড়ার বাসিন্দা এই নেতা তৃণমূল থেকে উঠে এসেছেন। শিবিরের সর্বনিম্ন স্তর ‘কর্মী’ থেকে শুরু করে ধাপে ধাপে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করে নগর জামায়াতের আমিরের পদ পান ২০২৪ সালে। রোকনদের ভোটেই তিনি আমির নির্বাচিত হন দুই বছরের জন্য। রাজনীতি করতে গিয়ে এক ডজনের বেশি সুনির্দিষ্ট মামলার আসামি হয়েছেন। বহুবার জেল খেটেছেন। সর্বশেষ আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে টানা চার বছর জেল খাটেন। তিনি এর আগে ১৯৯১ ও ২০০১ সালে সাতকানিয়া লোহাগাড়া আসনে জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে দুই দফায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১ মেয়াদে সংসদে জামায়াতের সংসদীয় দলের হুইপ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। চট্টগ্রামে দলের প্রয়াত আমির অধ্যাপক গোলাম আযমকে লালদিঘি মাঠে প্রতিরোধ করতে যারা এসেছিলেন সামনে থেকে তাদের প্রতিহত করেছিলেন শাহজাহান চৌধুরী। নানা কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে আলোচনা কিংবা সমালোচনায় পাদপ্রদীপের আলোয় আসা তার মতো জামায়াতের দ্বিতীয় কোনো নেতা চট্টগ্রামে নেই বললেই চলে।
৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর চট্টগ্রামে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন। জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, গোয়েন্দা সংস্থা থেকে শুরু করে সব জায়গায় তার গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হয়। কিন্তু তার এমন প্রভাবে স্বয়ং দলেরই একটি পক্ষ ‘ঈর্ষাকাতর’ হয়ে পড়ে। ৫ আগস্টের পর চট্টগ্রাম মহানগর এবং সাতকানিয়া উপজেলায় তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে দখল-বেদখল, সন্ত্রাস-চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপকর্মের অভিযোগ ওঠে। এদের দমন না করে উল্টো আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ উঠে। যা দলের ভাবমূর্তি ব্যাপকভাবে ক্ষুণ্ন করেছে বলে মনে করেন দলের সাধারণ নেতাকর্মী এবং রোকন পর্যায়ের নেতারা।
সাতকানিয়ায় মাস দুয়েক আগে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে তার অনুসারী হিসেবে পরিচিত দুই জামায়াত ক্যাডার গণপিটুনিতে নিহত হন। চট্টগ্রামে এশিয়ার বিখ্যাত দ্বীনি প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত ষোলশহর জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলীয়া মাদ্রাসার প্রতিটি কক্ষে সেনাবাহিনীর তল্লাশি করে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধার এবং ফটিকছড়ির মাইজভান্ডার ও পটিয়ার আমির ভান্ডার দরবার ঘেরাও করলেও অস্ত্র পাওয়া যাবে বলে একটি সভায় বক্তব্য দেন।
ওই বক্তব্য ফেসবুকে ভাইরাল হলে এ বিষয়ে শাহজাহান চৌধুরীকে নিয়ে সবাই ট্রল করতে থাকেন। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে এমন মিথ্যাচারের প্রতিবাদ জানিয়ে তাকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেওয়া হয়। একজন দায়িত্বশীল নেতা হয়ে কোনো ধরনের খোঁজ-খবর না নিয়ে এমন বক্তব্য দেওয়ায় নিজ দলের নেতা-কর্মিদের মধ্যেও মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। এ অবস্থায় ফেসবুক লাইভে এসে শাহাজাহান চৌধুরী তার ওই বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ এবং ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
এ ছাড়া চট্টগ্রামে আন্দোলনরত একাধিক নারীকে প্রকাশ্যে লাথি মেরে ফেসবুকে ভাইরাল হয় আকাশ চৌধুরী নামে শাহজাহান চৌধুরীর অনুসারী এক জামায়াত ক্যাডার। ইমাম রইস উদ্দিন হত্যাকারীদের গ্রেফতারের প্রতিবাদে আহলে সুন্নাতের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ সমাবেশে দলবল নিয়ে সেই আকাশ চৌধুরী প্রশাসনের সামনেই এলোপাতাড়ি হামলা চালিয়ে ১৫ নেতা-কর্মিকে আহত করেন। বহদ্দারহাট থেকে এক যুবককে তুলে নেওয়ার ঘটনায় আকাশ চৌধুরীর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। সেই আকাশ চৌধুরী শাহজাহান চৌধুরীর সঙ্গে থাকা নিজের অনেক ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেন।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক সংগঠনের একাধিক নেতা বলেন, মূলত সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ ধাপ রোকন পর্যায়ে থাকা নগর ও সাতকানিয়ার নেতারা কেন্দ্রে অভিযোগ দেন শাহজাহান চৌধুরীর বিরুদ্ধে। এই অভিযোগ তদন্ত করে দলের ভাবমূর্তি রক্ষার স্বার্থেই শাহজাহান চৌধুরীর মতো নেতাকে মেয়াদ ফুরানোর ৮ মাস আগেই আমির পদ থকে সরানোর কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে দলকে।