যে কারনে ঢাকায় নেতৃত্ব দেওয়ার লোক খুঁজছে আওয়ামী লীগ
দীর্ঘ ১৫ বছরের শাসন থেকে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে। বিদেশে আশ্রয় নিয়েছেন আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীরাও। আর দেশের ভেতরে বিপর্যস্ত ও সংকট অবস্থায় তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। এমন অবস্থায় রাজনৈতিক অঙ্গনে দলটিকে নিষ্ক্রিয় বলা যায়। তবে বিরূপ পরিস্থিতির মধ্যেও ঘুরে দাঁড়াতে চাচ্ছে দলটি। তাই ঢাকায় নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য লোক খুঁজছে তারা। আপাতত দেশের ভেতরে রাজনীতিতে সক্রিয় অবস্থানকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন বলে জানাচ্ছেন দলের নেতারা। সম্প্রতি বিপর্যস্ত দলটি আকস্মিক ঝটিকা মিছিল ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভর করে এগোতে চাচ্ছে। এর বাইরে বড় কোনো কর্মসূচি নিয়ে রাজনীতির মাঠে টিকে থাকার মতো তাদের সাংগঠনিক অবস্থা এখনো হয়নি। অন্যদিকে, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ ও ফ্যাসিবাদের তকমা এড়িয়ে দেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের শিগগিরই ফিরবে কি না, এই প্রশ্নও রয়েছে সর্বত্র। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দেওয়া আওয়ামী লীগ প্রায় ৭৬ বছর বয়সে আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় এবার বেশি সংকটে পড়েছে। সংকটে থাকা তৃণমূলের অনেকেই বলেছেন, সে সময় প্রথমে তাদের কাছে জীবন বাঁচানোই প্রধান বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তাদের অনেকে দেশের ভেতরেই পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। অনেকে গ্রেপ্তার হয়েছেন। সরকারের পতনের আট মাস পার হলেও দেশে থাকা তাদের কোনো নেতাই হাল ধরতে বা ঘুরে দাঁড়াতে পারেননি। আর ভারত ও পশ্চিমের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছেন, আওয়ামী লীগের এমন কয়েকজন নেতা বলেছেন, তাদের শীর্ষ নেতা শেখ হাসিনাসহ তারা এখন মনে করছেন, দেশের ভেতরে দলের মুখপাত্র বা নেতা প্রয়োজন, যিনি আত্মগোপনে না থেকে প্রকাশ্যে এসে বিপর্যস্ত নেতাকর্মীদের সংগঠিত করবেন। তাদের এমন চিন্তার মধ্যে রয়েছে সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও সাবেক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরীর নাম। কিন্তু গ্রেপ্তার, মামলার ভয় বা প্রতিকূল পরিস্থিতিতে এখনো কেউ সাহস করে এগিয়ে আসেননি। সেভাবে বিতর্কিত নন, দলটির এমন অন্য কোনো নেতা এগিয়ে আসবেন, সে ধরনের কোনো ইঙ্গিতও মিলছে না। তবে যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপে রয়েছেন, এমন একাধিক নেতার বক্তব্য হচ্ছে, তাদের দল ঢাকায় মুখপাত্র বা কোনো পদ দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো নেতার নাম ঘোষণা করতে চাইছে না। কারণ কারও নাম আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হলেই তাকে মামলা, গ্রেপ্তারের মুখে পড়তে হতে পারে। এটাও বিবেচনায় নিতে হচ্ছে। ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’ নিয়ে দলে চিন্তা কী রাজনীতিতে ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’ বিষয়ে একটা আলোচনা রয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের কেউ কেউ বিভিন্ন সময় এমন ইঙ্গিতপূর্ণ বক্তব্যও দিয়েছেন। তবে আওয়ামী লীগের ভেতরে এ ধরনের কোনো চিন্তা নেই বলে দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলে বোঝা যাচ্ছে। বরং দলটি এ ধরনের আলোচনাকে তাদের দলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছে। দলটির শীর্ষ নেতাসহ বিদেশে অবস্থান করা কয়েকজন নেতা বিষয়টি নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে বক্তব্য তুলে ধরেছেন। তারা এমনও বলেছেন যে, রিফাইন্ড আওয়ামী লীগের কথা বলে তাদের দল ভাঙার ‘ষড়যন্ত্র’ করা হচ্ছে। যদিও রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ নিয়ে যে আলোচনা রয়েছে, তাতে সাবের হোসেন চৌধুরী এবং সাবেক স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর নাম এসেছে। আবার এখন আওয়ামী লীগের নেতা খোঁজা হচ্ছে, তাতেও সাবের হোসেন চৌধুরীর নাম বলছেন বিদেশে থাকা নীতিনির্ধারকদের কেউ কেউ। শেখ হাসিনার বিকল্প কী ভাবছে আওয়ামী লীগ দেশের রাজনীতিতে সক্রিয় অবস্থানে ফিরতে আওয়ামী লীগ তাদের নেতৃত্ব তৈরির চেষ্টা করছে, কিন্তু তা বিকল্প নেতৃত্ব নয়। দলটি তাদের নেতা শেখ হাসিনার বিকল্প অন্য কাউকে চিন্তা করছে না, এটা নিঃসন্দেহে বলা যায়। বিদেশে অবস্থান করা অন্তত পাঁচজন এবং দেশে আত্মগোপনে থাকা চার জেলার নেতারা দলের এমন অবস্থান তুলে ধরেন। দেশের ভেতরে নেতা খোঁজার বিষয়টি এসেছে প্রয়োজনের তাগিদে। কারণ আওয়ামী লীগ দাবি করছে, বিদেশে অবস্থান করা নেতাদের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ তৈরি হয়েছে। তারা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অন্তর্বর্তী সরকারের নেতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরছেন। এমনকি দেশের ভেতরে আত্মগোপনে বা পালিয়ে থাকা তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গেও এখন যোগাযোগ সৃষ্টি হয়েছে বলে তারা দাবি করছেন। আর এই যোগাযোগের ভিত্তিতে দিবসভিত্তিক ঝটিকা মিছিলের কর্মসূচি পালন করা সম্ভব হচ্ছে। এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা দিন দিন সক্রিয় হচ্ছেন। আবার শেখ হাসিনাসহ বিদেশ অবস্থান করা দলের অনেক নেতার বক্তব্য বিভিন্ন সময় বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের জন্যও অনেক ক্ষেত্রে বিপদ বাড়িয়েছে౼এমন আলোচনাও রয়েছে রাজনীতিতে। এ ছাড়া বিদেশে থেকে দলের নেতৃত্ব হয়তো তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সংগঠিত করে মাঝেমধ্যে ঢাকায় বা ঢাকার বাইরে কোনো কোনো জেলায় ঝটিকা মিছিল করাতে সক্ষম হচ্ছেন। দেশে দলের কর্মকাণ্ডে কোনো নেতা এগিয়ে এলে তিনি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বা নির্দেশনা মেনে চলবেন, এটাই দলটির অবস্থান। দলটির নেতারা দাবি করছেন, তাদের এসব মিছিল ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে। কিন্তু সেটা রাজনীতিতে কতটা প্রভাব তৈরি করছে, সেই প্রশ্ন রয়েছে। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাসিম বলেন, বিপর্যস্ত দলের ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে শেখ হাসিনাই নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এ ব্যাপারে তাদের দলের কোনো পর্যায়ে ভিন্ন কোনো চিন্তা নেই। ক্ষমা, অনুশোচনার প্রশ্নে এখনো ‘না’ আন্দোলনের সময় দমননীতি ও হত্যাকাণ্ডের জন্য আওয়ামী লীগ যদি ক্ষমা চায় বা অনুশোচনা করে, তাহলে আওয়ামী লীগ রাজনীতিতে ফিরতে পারে, এমন একটা আলোচনা রয়েছে রাজনীতির মাঠে। সরকারেরও কেউ কেউ এ ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন। তবে ক্ষমা চাওয়ার কোনো চিন্তা দলটিতে এখনো নেই। তাদের মধ্যে কোনো অনুশোচনা আছে, এমন ইঙ্গিতও পাওয়া যায় না। বরং তারা এখনো 'ষড়যন্ত্র-তত্ত্ব' নিয়েই আছেন। দলটির কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেন, তাদের সরকারের পতনের আগে এবং অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে সব হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার তারা চান। কিন্তু অনুশোচনার প্রশ্নে রাজনৈতিক দল হিসেবে

দীর্ঘ ১৫ বছরের শাসন থেকে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে। বিদেশে আশ্রয় নিয়েছেন আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীরাও। আর দেশের ভেতরে বিপর্যস্ত ও সংকট অবস্থায় তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। এমন অবস্থায় রাজনৈতিক অঙ্গনে দলটিকে নিষ্ক্রিয় বলা যায়।
তবে বিরূপ পরিস্থিতির মধ্যেও ঘুরে দাঁড়াতে চাচ্ছে দলটি। তাই ঢাকায় নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য লোক খুঁজছে তারা। আপাতত দেশের ভেতরে রাজনীতিতে সক্রিয় অবস্থানকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন বলে জানাচ্ছেন দলের নেতারা।
সম্প্রতি বিপর্যস্ত দলটি আকস্মিক ঝটিকা মিছিল ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভর করে এগোতে চাচ্ছে। এর বাইরে বড় কোনো কর্মসূচি নিয়ে রাজনীতির মাঠে টিকে থাকার মতো তাদের সাংগঠনিক অবস্থা এখনো হয়নি।
অন্যদিকে, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ ও ফ্যাসিবাদের তকমা এড়িয়ে দেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের শিগগিরই ফিরবে কি না, এই প্রশ্নও রয়েছে সর্বত্র। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দেওয়া আওয়ামী লীগ প্রায় ৭৬ বছর বয়সে আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় এবার বেশি সংকটে পড়েছে।
সংকটে থাকা তৃণমূলের অনেকেই বলেছেন, সে সময় প্রথমে তাদের কাছে জীবন বাঁচানোই প্রধান বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তাদের অনেকে দেশের ভেতরেই পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। অনেকে গ্রেপ্তার হয়েছেন। সরকারের পতনের আট মাস পার হলেও দেশে থাকা তাদের কোনো নেতাই হাল ধরতে বা ঘুরে দাঁড়াতে পারেননি।
আর ভারত ও পশ্চিমের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছেন, আওয়ামী লীগের এমন কয়েকজন নেতা বলেছেন, তাদের শীর্ষ নেতা শেখ হাসিনাসহ তারা এখন মনে করছেন, দেশের ভেতরে দলের মুখপাত্র বা নেতা প্রয়োজন, যিনি আত্মগোপনে না থেকে প্রকাশ্যে এসে বিপর্যস্ত নেতাকর্মীদের সংগঠিত করবেন।
তাদের এমন চিন্তার মধ্যে রয়েছে সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও সাবেক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরীর নাম।
কিন্তু গ্রেপ্তার, মামলার ভয় বা প্রতিকূল পরিস্থিতিতে এখনো কেউ সাহস করে এগিয়ে আসেননি। সেভাবে বিতর্কিত নন, দলটির এমন অন্য কোনো নেতা এগিয়ে আসবেন, সে ধরনের কোনো ইঙ্গিতও মিলছে না।
তবে যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপে রয়েছেন, এমন একাধিক নেতার বক্তব্য হচ্ছে, তাদের দল ঢাকায় মুখপাত্র বা কোনো পদ দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো নেতার নাম ঘোষণা করতে চাইছে না। কারণ কারও নাম আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হলেই তাকে মামলা, গ্রেপ্তারের মুখে পড়তে হতে পারে। এটাও বিবেচনায় নিতে হচ্ছে।
‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’ নিয়ে দলে চিন্তা কী
রাজনীতিতে ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’ বিষয়ে একটা আলোচনা রয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের কেউ কেউ বিভিন্ন সময় এমন ইঙ্গিতপূর্ণ বক্তব্যও দিয়েছেন।
তবে আওয়ামী লীগের ভেতরে এ ধরনের কোনো চিন্তা নেই বলে দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলে বোঝা যাচ্ছে। বরং দলটি এ ধরনের আলোচনাকে তাদের দলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছে।
দলটির শীর্ষ নেতাসহ বিদেশে অবস্থান করা কয়েকজন নেতা বিষয়টি নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে বক্তব্য তুলে ধরেছেন। তারা এমনও বলেছেন যে, রিফাইন্ড আওয়ামী লীগের কথা বলে তাদের দল ভাঙার ‘ষড়যন্ত্র’ করা হচ্ছে।
যদিও রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ নিয়ে যে আলোচনা রয়েছে, তাতে সাবের হোসেন চৌধুরী এবং সাবেক স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর নাম এসেছে। আবার এখন আওয়ামী লীগের নেতা খোঁজা হচ্ছে, তাতেও সাবের হোসেন চৌধুরীর নাম বলছেন বিদেশে থাকা নীতিনির্ধারকদের কেউ কেউ।
শেখ হাসিনার বিকল্প কী ভাবছে আওয়ামী লীগ
দেশের রাজনীতিতে সক্রিয় অবস্থানে ফিরতে আওয়ামী লীগ তাদের নেতৃত্ব তৈরির চেষ্টা করছে, কিন্তু তা বিকল্প নেতৃত্ব নয়। দলটি তাদের নেতা শেখ হাসিনার বিকল্প অন্য কাউকে চিন্তা করছে না, এটা নিঃসন্দেহে বলা যায়।
বিদেশে অবস্থান করা অন্তত পাঁচজন এবং দেশে আত্মগোপনে থাকা চার জেলার নেতারা দলের এমন অবস্থান তুলে ধরেন।
দেশের ভেতরে নেতা খোঁজার বিষয়টি এসেছে প্রয়োজনের তাগিদে। কারণ আওয়ামী লীগ দাবি করছে, বিদেশে অবস্থান করা নেতাদের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ তৈরি হয়েছে। তারা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অন্তর্বর্তী সরকারের নেতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরছেন।
এমনকি দেশের ভেতরে আত্মগোপনে বা পালিয়ে থাকা তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গেও এখন যোগাযোগ সৃষ্টি হয়েছে বলে তারা দাবি করছেন। আর এই যোগাযোগের ভিত্তিতে দিবসভিত্তিক ঝটিকা মিছিলের কর্মসূচি পালন করা সম্ভব হচ্ছে।
এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা দিন দিন সক্রিয় হচ্ছেন।
আবার শেখ হাসিনাসহ বিদেশ অবস্থান করা দলের অনেক নেতার বক্তব্য বিভিন্ন সময় বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের জন্যও অনেক ক্ষেত্রে বিপদ বাড়িয়েছে౼এমন আলোচনাও রয়েছে রাজনীতিতে।
এ ছাড়া বিদেশে থেকে দলের নেতৃত্ব হয়তো তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সংগঠিত করে মাঝেমধ্যে ঢাকায় বা ঢাকার বাইরে কোনো কোনো জেলায় ঝটিকা মিছিল করাতে সক্ষম হচ্ছেন। দেশে দলের কর্মকাণ্ডে কোনো নেতা এগিয়ে এলে তিনি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বা নির্দেশনা মেনে চলবেন, এটাই দলটির অবস্থান।
দলটির নেতারা দাবি করছেন, তাদের এসব মিছিল ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে। কিন্তু সেটা রাজনীতিতে কতটা প্রভাব তৈরি করছে, সেই প্রশ্ন রয়েছে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাসিম বলেন, বিপর্যস্ত দলের ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে শেখ হাসিনাই নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এ ব্যাপারে তাদের দলের কোনো পর্যায়ে ভিন্ন কোনো চিন্তা নেই।
ক্ষমা, অনুশোচনার প্রশ্নে এখনো ‘না’
আন্দোলনের সময় দমননীতি ও হত্যাকাণ্ডের জন্য আওয়ামী লীগ যদি ক্ষমা চায় বা অনুশোচনা করে, তাহলে আওয়ামী লীগ রাজনীতিতে ফিরতে পারে, এমন একটা আলোচনা রয়েছে রাজনীতির মাঠে। সরকারেরও কেউ কেউ এ ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন।
তবে ক্ষমা চাওয়ার কোনো চিন্তা দলটিতে এখনো নেই। তাদের মধ্যে কোনো অনুশোচনা আছে, এমন ইঙ্গিতও পাওয়া যায় না। বরং তারা এখনো 'ষড়যন্ত্র-তত্ত্ব' নিয়েই আছেন।
দলটির কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেন, তাদের সরকারের পতনের আগে এবং অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে সব হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার তারা চান। কিন্তু অনুশোচনার প্রশ্নে রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ জনগণের কাছে জবাবদিহি করবে। এ জন্য অন্য কোনো পক্ষের প্রশ্নের জবাব দেওয়ার বিষয় নেই বলে উল্লেখ করেন তিনি।
বিদেশে অবস্থান করা দলটির আরেকজন নেতা জানান, পরিস্থিতি সামলাতে তাদের কিছু ভুল ছিল, এমন আলোচনাও তাদের মধ্যে আছে। দলগতভাবে অবশ্য তারা এখনো কিছু বলেননি।
এই নেতা উল্লেখ করেন, তাদের দলের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ এখনও হয়নি। তারা এখন পরিকল্পনার মাধ্যমে এগোতে চাইছেন এবং অল্প সময়ের মধ্যে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য তুলে ধরার বিষয় নিয়েও তারা আলোচনা করছেন।
নির্বাচনে অবস্থান কী হবে?
এখন বিএনপিসহ সক্রিয় বেশির ভাগ দল নির্বাচনকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। প্রশ্ন উঠছে, আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবে কি না? কারণ গণঅভ্যুত্থানের ছাত্র নেতৃত্বের নতুন দল এনসিপিসহ কয়েকটি দল আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি করছে।
আর নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ পেলে দলটির অবস্থান কী হবে, এ নিয়েও আলোচনা রয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের ভেতরে অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার বিষয়ে অবস্থান দেখা যাচ্ছে।
দলটির একাধিক নেতা বলছেন, নির্বাচনে অংশ নেওয়া তাদের দলের জন্য আত্মঘাতী হবে, এই আলোচনা তাদের মধ্যে রয়েছে। তারা অবশ্য রাজনীতিতে ফিরতে নির্বাচনের সময়কে সুযোগ হিসেবে কাজে লাগাতে চান। তারা মনে করেন, অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ রয়েছে।
কেন আত্মঘাতী মনে করছে আওয়ামী লীগ
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত দলটির নেতাকর্মীরা এলাকাছাড়া হয়েছেন। নির্বাচনের সময় যদি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালানোর সুযোগ তৈরি হয়, হয়তো ঢাকায় দলের কর্মসূচি পালন করা যেতে পারে।
কিন্তু দলের নেতাকর্মীরা এলাকায় ফিরতে পারবেন, সেই নিশ্চয়তা নেই বলে আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করেন। তারা বলছেন, যেসব দল এখন রাজনীতিতে সক্রিয় রয়েছে, এগুলোর মধ্যে বিএনপিসহ বেশির ভাগ দলই তাদের প্রতিপক্ষ।
এদিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে বিচার নির্বাচনের আগে শেষ করার একটা চেষ্টা রয়েছে। এমন বাস্তবতা বিবেচনায় রেখে আওয়ামী লীগ নেতাদের অনেকে নির্বাচনে তাদের দলের অংশগ্রহণকে আত্মঘাতী হিসেবে দেখছেন।
সূত্র : বিবিসি