মাগুরায় শিশু ধর্ষণ: মধ্যরাতে আদালতে শুনানি, চার আসামির রিমান্ড মঞ্জুর
শিশু ধর্ষণের বিচার দাবিতে আদালতফটক অবরুদ্ধ করে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ। গতকাল রোববার দুপুরে মাগুরা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ফটকে

মাগুরায় আট বছর বয়সী এক শিশুকে ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্তদের নিরাপত্তার ঝুঁকি থাকায়, পুলিশ গতকাল রবিবার দিনের বেলায় আদালতে উপস্থাপন করতে পারেনি। পরিস্থিতি বিবেচনায়, আদালত গভীর রাতে রিমান্ড আবেদনের শুনানি করেন। মূল অভিযুক্ত, ভুক্তভোগী শিশুর বোনের শ্বশুর, সাত দিনের রিমান্ডে রয়েছেন; স্বামী, শাশুড়ি এবং ভাশুর প্রত্যেকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে রয়েছেন। মাগুরার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল মতিন এই আদেশ দেন।
আদালতের সূত্র ও পুলিশের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে জানা যায়, গতকাল সকাল থেকে প্রায় সারাদিন মাগুরা শহরে শিশু ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মৃত্যুদণ্ডের দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। সকাল ১১টা থেকে দুপুর ২:৩০ পর্যন্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের প্রধান ফটক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন আন্দোলনকারীরা। এরপর সেখান থেকে সরে গিয়ে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভায়না মোড় মহাসড়ক অবরোধ করেন তাঁরা। সন্ধ্যার পর শহরে পুনরায় মশাল মিছিল করেন আন্দোলনকারীরা। এমন পরিস্থিতিতে, অভিযুক্তদের নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কা থাকায় পুলিশ তাদের আদালতে হাজির করতে পারেনি।
গতকাল মধ্যরাতের পর রিমান্ড শুনানি শুরু হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা অভিযুক্তদের সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। এ সময় অভিযুক্তদের পক্ষে কোনো আইনজীবী শুনানিতে অংশ নেননি। আদালতে নিজেদের পক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হলে, অভিযুক্তরা নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন এবং রিমান্ড না দেওয়ার অনুরোধ জানান। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার পক্ষ থেকে জানানো হয়, ভুক্তভোগী শিশু অচেতন থাকায় তার জবানবন্দি নেওয়া যায়নি, তাই অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরি। উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে, বিচারক মূল অভিযুক্তকে সাত দিন এবং অন্য তিন অভিযুক্তকে পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, রিমান্ডের আবেদনসহ অন্যান্য কাগজপত্র তৈরি থাকলেও, গতকাল দিনের বেলায় অভিযুক্তদের আদালতে হাজির করার ঝুঁকি নেওয়া হয়নি। সারাদিন আন্দোলনকারীরা আদালতের ফটক ঘিরে রেখেছিলেন এবং অভিযুক্তদের তাদের হাতে তুলে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছিলেন। এই কারণে রাতে শুনানি করা হয়।
মাগুরা শহরতলীর নিজনান্দুয়ালী গ্রামে বোনের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে গত বৃহস্পতিবার দুপুরে শিশুটি ধর্ষণের শিকার হয় বলে পরিবারের অভিযোগ। শিশুটি বর্তমানে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন। গত শনিবার শিশুটির মা বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মাগুরা সদর থানায় মামলা করেন। শিশুটির বোনের স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি ও ভাশুরকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তারা আগে থেকেই পুলিশের হেফাজতে ছিলেন। ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে বোনের স্বামী, শাশুড়ি ও ভাশুরকে কারাগারে পাঠানো হয়।